Thursday, December 19, 2013

প্রথম মিলনে রক্তপাত এর মাধ্যমে নারীর কুমারিত্ব প্রমাণিত হয় কি?




প্রথম মিলনে রক্তপাত এর মাধ্যমে নারীর কুমারিত্ব প্রমাণিত হয়, এটি বিশ্বব্যাপি একটি প্রচলিত ধারণা। অনেকেরধারণা নারীর যৌনাঙ্গের ভিতরে এক টুকরা মাংস পিন্ড থাকে যা প্রথম মিলনে ছিন্নভিন্ন হয়ে রক্তপাত ঘটায়। আবার অনেকের ধারণা, মাংসপিন্ডনয় এট আসলে রক্তনালী দিয়ে তৈরীএকটা জালের মত বস্তু, যা প্রথম মিলনে ছিড়েগিয়ে রক্তপাত ঘটায়। তবে বেশিরভাগ মানুষের ধারণা হলো, এটিআসলে একটি পর্দা যা যৌনাঙ্গের ভিতরের দিকে থাকেএবং যৌনাঙ্গের প্রবেশপথ কে সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখে। প্রথম যৌনমিলনে তা ছিড়ে গিয়ে রক্তপাত ঘটায়। একবার চিন্তা করে দেখুন, তাই যদি হতো, তাহলে মহিলাদের ঋতুস্রাব কি আসলেই সম্ভব হতো? আসলে নারীর যৌনাংগ সমন্ধে স্বচ্ছ ধারণার অভাবই এসব ধারণার মূল কারণ। এই সম্পর্কে আধুনিক ধারণার প্রবর্তক বিখ্যাত আরব বিজ্ঞানী ইবনে-সিনা। আধুনিক মেডিকাল সাইন্স অনুযায়ী, নারীর যৌনাঙ্গের প্রবেশ পথের - সেন্টিমিটার ভিতরে ইলাস্টিক বা স্থিতিস্তাপক একধরণের টিস্যু থাকে। একে বলা হয় hymen. এটাকে তুলনাকরা যেতে পারে দরজার ফ্রেম বা চৌকাঠ এর সাথে, যা দরজার চারিদিকে লাগানো থাকে।কিন্তু কোনভাবেই এটি বদ্ধ দরজার সাথে তুলনীয় না। এটির আকৃতি এবং আকার একেকনারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। কারো ক্ষেত্রে এটি যৌনাঙ্গের প্রবেশপথের চারিদিকে গোল করে লাগানো থাকে, কারো ক্ষেত্রে এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি অর্থাৎ শুধু একপাশে লাগানো। বেশি সংখ্যক নারীর ক্ষেত্রেই এটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি এটির আকারও একেক নারীর ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। যোনী পথকে একটা ঘড়ি আকৃতিরজিনিস হিসেবে কল্পনা করলে, সবচেয়ে বড় hymen এর আকার হলো, যদিএকটা ঘড়িতে যদি ১০টা ১০ বেজে থাকে, তবে ঘন্টা মিনিটের কাটা দুটিরমধ্যবর্তী স্থানটুকু hymenদ্বারা আবৃত থাকলে। সবচেয়ে ছোট hymen হলো যদি ঘড়িতে ৬টা বেজে থাকে, তবে ঘন্টা মিনিটের কাটা দুটিরমধ্যবর্তী স্থানটুকু hymenদ্বারা আবৃত থাকলে,খুব কম সংখ্যক নারী (.০৩% নারী) hymen ছাড়া জন্মগ্রহণ করেন। আবার খুব কমসংখ্যক নারী যৌনাংগের প্রবেশ পথ রুদ্ধকারী hymen নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। যতদিন পর্যন্ত এরা প্রাপ্তবয়স্কনা হয় এবং ঋতুস্রাব নাহয়, তারা কোন সমস্যা বোধ করেন না।বয়প্রাপ্তির পর ঋতুস্রাব বের হতেনাপেরে ভিতরের দিকে চলে যায় ব্যাথারসৃষ্টি করে। মেডিকেলের ভাষায় একে বলা হয়, hematocolpos এদের অপারেশন এর মাধ্যমে hymen অপসারণেরমাধ্যমে ঋতুস্রাববের করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। একটি নারী কুমারী হলেও নিম্নের কিছু কারণে, প্রথম মিলনে রক্তপাত না হতে পারে। >দরজার চৌকাঠের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে, প্রথম মিলনে রক্তপাত ্যান্ডম বা আপেক্ষিক ব্যাপার। এটি নির্ভর করবে মিলনের তীব্রতা/ রুক্ষতা, যোনীপথের পিচ্ছিলতা ইত্যাদিবিষয়ের উপর। আগের যুগে প্রথম মিলনে অনেক নারীই ভীত থাকত এবংসঠিক ভাবে উত্তেজিত হতে পারতো না, তাইhymen ছিড়ে রক্তপাতের শিকার হত। বর্তমান যুগে যৌনক্রীড়ায়মেয়েদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্ভাবনা আরো কমিয়ে দেয়। >কারো কারো hymen জন্মগত ভাবে পাতলা থাকতে পারে এবং শারিরীক এক্টিভিটি যেমন ব্যায়াম, সাইকেল চালনা ইত্যাদির কারণে তা অজ্ঞাতসারে ছিড়ে যেতে পারে। >উপরে hymen এর যে আকার বলাহয়েছে সেই অনুযায়ী কারো hymen এর আকার ছোট হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে hymen ছিড়ে যাওয়া নির্ভর করে পুরুষাঙ্গেরআকারের উপরে। >আবার নারী ভেদে hymen এর স্থিতিস্থাপকতা কম বেশী হতে পারে। যার স্থিতিস্থাপকতা বেশী, তার hymenছেড়ার সম্ভাবনা কম। > বয়স বাড়ার সাথে সাথে hymen এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়তে থাকে। পুরোন যুগে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে এবং কমস্থিতিস্থাপক hymenপ্রথম মিলনে ছিড়ে রক্তপাত ঘটাত বলেই নারীর সতীত্বের সাথে রক্তপাতের সম্পর্কের ধারণা গড়ে উঠে। কিন্তু বর্তমানে মেয়েদের বেশী বয়সে বিয়ে হওয়াতে, অধিকতর স্থিতিস্থাপক hymenএর কারণেঅনেকে রক্তপাতের সম্মুখীন না হতে পারেন। > এছাড়াও খুব কম সংখ্যক নারীর জন্মগতভাবে hymen থাকেনা। এদের ক্ষেত্রে তাই প্রথম মিলনে hymen থেকে রক্তপাতের কথাটা খাটেনা। আবার কোন কোন নারী কুমারী না হলেও তাররক্তপাত হতে পারে >যদি কোন নারী যথেষ্ট পরিমানে উত্তেজিত না থাকে এবং যৌনরস দ্বারা যোনিপথ পিচ্ছিল না থাকে অথবা পুরুষসংগী যদি রুক্ষ ভাবে মিলনে অভ্যস্ত থাকে সে ক্ষেত্রে যোনীর টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রক্তপাত হতেপারে। কিন্তু এই রক্ত hymen থেকে আসেনা। তবে আপেক্ষিক ভাবে রক্তের উৎস সম্নধে জানার কোন উপায় থাকেনা। >কিছু ইনফেকশনের কারণে মিলনের সময় রক্তপাত হতে পারে (যেমন Chlamydia infection) >প্রথম মিলনেই hymen নির্মূল হবে তা নয়। আবার কয়েকটি মিলনে অল্প অল্পকরে নির্মূল হতে পারে। ফলে কুমারী না এমন নারীও কিন্তুমিলনের সময় রক্তপাতের সম্মুখীন হতে পারে, যদিও এটা তার প্রথম মিলন নয়। ঠিক কত ভাগ মহিলা প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্মুখীন হন, তা নিয়ে তেমনব্যপক কোন গবেষনা হয়নি। ১৯৯৮ সালে Dr. Sara Patterson-Brown এর করা the British Medical Journal প্রকাশিত একটি গবেষনার কথা জানা যায়। গবেষনাতে অংশগ্রহণ কারী ৬৩% মহিলা জানান যে তারা প্রথম মিলনে রক্তপাতের সম্মুখীন হননি যুগ যুগ ধরে, এই রক্তপাতের মাধ্যমে সতীত্বের পরীক্ষারকারণে অনেক নারীর প্রতি আংগুল উঠেছে। পৃথিবীর কোথাও কোথাও বিয়ের পর রক্তমাখা বিছানার চাদর প্রদর্শনের রেওয়াজ আছে। আরব বিশ্বে এমন কি বিয়ের আগে অনেক নারী অপারেশন করে hymen প্রতিস্থাপন করেন। যদিও ইসলামি কোন বই-পুস্তকে কোথাও এই পদ্ধতিতে নারীর সতীত্ব প্রমাণিত হয় বলে বলা নেই




0 comments:

Post a Comment